রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্যার কারণে পিছিয়ে যাওয়া এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আর এসএসসি শুরুর দেড় মাস পর নভেম্বরের শুরুতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি।
আমরা আশা করছি, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মাঝে বড় ধরনের বিরতি দেওয়া হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব পরীক্ষা শেষ করা হবে। পরীক্ষা শুরুর দুই সপ্তাহ আগে সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষা চলাকালীন দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে। ’
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ১৯ জুন। তবে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ায় ১৭ জুন এসএসসি পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা আসে।
মহামারীর কারণে পিছিয়ে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা এবার ১৯ জুন শুরু করে ৬ জুলাই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিলে সরকার ১৭ জুন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
সারা দেশে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বন্যাদুর্গত এলাকায় অনেক শিক্ষার্থীর বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সে কথা তুল ধরে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, আমরা ২৪ তারিখের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বই পাঠিয়ে দিতে পারব। সেই হিসেবে অগাস্টের মাঝামাঝি পরীক্ষা নেওয়ার পরীকল্পনা ছিল, কিন্তু অগাস্টে আবার বন্যা হওয়ার একটা আশঙ্কা আছে, তাই আমরা সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে এইচএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করব। আর এর ছয় সপ্তাহ পর, অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতে আমরা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু করব।
জুনের মাঝামাঝি এসএসসি পরীক্ষা শুরু করার পর ২২ আগস্ট থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসএসসি পিছিয়ে যাওয়ায় এইচএসসিও হবে নতুন সূচিতে।
বিলম্বের কারণে সিলেবাস বদলাবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে দীপুমনি বলেন, পরীক্ষার সিলেবাস আগের শিডিউলে যেভাবে করা হয়েছিল সেভাবেই হবে। পরীক্ষার্থীদের বলব, এবার যেন পরীক্ষার গ্যাপ বেশি আশা না করে। এমনভাবে তারিখ নির্ধারণ হবে যেন পরীক্ষার্থীরা কোনোভাবেই অসুবিধায় না পড়ে।
মহামারীর কারণে গত বছর এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে পুরো সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালেও সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হবে না।
পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী এবার এসএসসিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান- এই তিন বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। এ বিষয়গুলোর নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।
আর এইচএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষা না নিয়ে তা সবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হবে।
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষা- এই বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা হবে এসএসসিতে।
আর এইচএসসিতে পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি ও গ্রুপভিত্তিক নৈর্বচনিক তিনটি বিষয় এবং একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী।
এসএসসি ও এইচএসসিতে ২ ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট এবং রচনামূলক প্রশ্নের জন্য ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় থাকবে এবার। বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র- এই বিষয়গুলোতে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক আছে, সেগুলোতে ৪৫ নম্বরের (রচনামূলক ৩০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫ নম্বর) এবং ব্যবহারিক না থাকলে ৫৫ নম্বরের (রচনামূলক ৪০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫) পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।
পরীক্ষার্থীদের এবার নির্বাচনী পরীক্ষাও দিতে হবে না। এর পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নিতে পারবে।
এ বছর ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ বোর্ডে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১, দাখিলে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ ও কারিগরিতে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৪ জন। এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের চেয়ে প্রায় সোয়া দুই লাখ পরীক্ষার্থী কমেছে।